1. admin@alokitopotrika.com : alokitopotrika_560 :
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৬:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বুড়িমারী স্থলবন্দর এখনো পর্যন্ত ফ্যাসিস মুক্ত হয় নি বলে এবি পার্টির বিক্ষোভ মিছিল অবস্থান কর্মসূচি ও সংবাদ সম্মেলন শিবগঞ্জে শ্বশুরের কুৎসিত রূপ: পুত্রবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক, দিলেন বিভিন্ন অনুদান নওগাঁর রাণীনগরে আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ কিশোরগঞ্জে সরকারি খাস জমির উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ আত্রাইয়ে আইনজীবী ভাতিজা কর্তৃক জমি আত্মসাতের চেষ্টার প্রতিবাদে প্রতিবন্ধী চাচার সংবাদ সম্মেলন কাউনিয়ায় বিসিডিএসের মানববন্ধন লালমনিরহাটের পাটগ্রামে দেড় যুগ পর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত গাইবান্ধার আইন ফুলছড়িতে শৃংখলা কমিটির সভা শেষে ৬ ইউপি চেয়ারম্যান আটক প্রবাসীর ভালোবাসায় মানবিক উদ্যোগ—গাবতলীর দক্ষিণপাড়ায় দুস্থদের মাঝে টিন বিতরণ

দিনাজপুরে একই রশিতে মা-মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমে গুজব প্রচার

  • প্রকাশিত : শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৪ বার পাঠ করা হয়েছে

এনামুল মবিন(সবুজ)স্টাফ রিপোর্টার.

দিনাজপুর খানসামা উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বী একই রশিতে মা-মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্দেশ্যমূলক অপতথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। তারা দাবি করেন ধর্মান্তরিত হতে না চাওয়ায় আক্রোশে হিন্দু পরিবারকে খুন করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তবে এবিষয়ে নিহতের পরিবার বলছে, এমন দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন ও অস্বস্তিকর।

ভারতীয় গণমাধ্যম টিভি-৯ বাংলাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে বাংলাদেশে হিন্দু পরিবারকে ধর্ম বদলের চাপ, বাধা দেওয়ার আক্রোশে হিন্দু পরিবার খুন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে হিন্দু পরিবারকে ধর্ম বদলের চাপ, বাধা দেওয়ার আক্রোশে হিন্দু পরিবার খুন করে ঝুলিয়ে রাখে কট্টরপন্থীরা। কয়েক দিন ধরেই হিন্দু পরিবারকে হুমকি দিচ্ছিল কট্টরপন্থীরা।

ভিডিও প্রতিবেদনে উপস্থাপক ও টিভির সংবাদকর্মীর বক্তব্য প্রচার হলেও নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসীর কোনো বক্তব্য প্রচার করেনি টিভি-৯ বাংলা।

এই খবরের সত্যতা জানতে সরেজমিন দিনাজপুর খানসামা উপজেলার ৩নং আংগারপাড়া ইউনিয়নের আরাজী জুগীর ঘোপা গ্রামের বেণুপাড়া এলাকায় সেই মা সুজাতা রায় (২৬) ও মেয়ে নীলাদ্রি রায়ের (৬) বাড়িতে যাওয়া হয়। সেখানে নিহতের শাশুড়ি, ঠাকুমা, শ্বশুরবাড়ি লোকজন, এলাকাবাসী, আত্মীয়স্বজন ও সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাঁরা জানান,ভারতের পশ্চিমবঙ্গের টিভি-৯ বাংলা ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ একেবারেই গুজব।

প্রতিবেশীরা জানান, ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর মিথ্যা। ধর্ম বদল বিষয়ে কোনো চাপ কেউ প্রয়োগ করেনি। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা—সেই বিষয়ে নিহতের শ্বশুরবাড়ির পরিবার ও বাবার পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এর মাঝে এমন সংবাদ অস্বস্তিকর।

জানা যায়, ২০১৮ সালে পার্বতীপুর উপজেলার বিলাইচণ্ডী ইউনিয়নের বাঘাচড়া ঝাউপাড়ার অমিত্য রায়ের মেয়ের সঙ্গে প্রস্তাবের মাধ্যমে ভক্ত রায়ের বিয়ে হয়। ভক্ত রায় পেশায় একজন দরজি। নিহত সুজাতা রায় অনার্স তৃতীয় বর্ষের বাংলা বিভাগের ছাত্রী ও বৈবাহিক জীবনে নীলাদ্রি রায় নামে ৬ বছর বয়সী একটি মেয়েসন্তান রয়েছে।

নিহতের বাবার পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আত্মহত্যার কথা বলছেন।

নিহতের শয়নকক্ষে একটি চিঠি পাওয়া গেছে সেখানে লেখা ছিল, আমার মৃত্যুতে কেউ দায়ী নয়। তবে দুই পৃষ্ঠার এই চিঠির হাতের লেখা নিহতের কি না সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিন্নাহ আল মামুন।

গত বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের আরাজী যুগীর ঘোপা গ্রামের বেণুপাড়ায় নিহতের শয়নকক্ষ থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের বাবার জিম্মায় মরদেহ হস্তান্তর ও গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) তাঁরা দাহ সম্পন্ন করেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা অমিত্য রায় বাদী হয়ে খানসামা থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

সুজাতার দাদি শাশুড়ি কুমোদিনী রায় বলেন, আমার নাতনি বউ সুজাতা রায় ও তার মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নিয়ে ভারতীয় টিভিতে যে খবর দেখাইছে—এটা সঠিক নয়। সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক আছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর আশপাশের মুসলমানরা আমাদের পাহারা ও সাহস দিয়েছে। সেখানে এমন ঘটনা মিথ্যা।

মৃত সুজাতার শাশুড়ি তৃফলা রানী রায় বলেন, নিহতের দিনেও হাসিখুশি ও স্বাভাবিক ছিল সুজাতা। আমরা সেদিন সবাই বাড়ির সাংসারিক কাজে ব্যস্ত ছিলাম। সন্ধ্যাবেলা সন্ধ্যাবাতি দেওয়ার জন্য সুজাতার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তার দরজা খুলে দেখি সে ও তার মেয়ে শয়নকক্ষ ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। এটা দেখে আমরা নিজেরাও হতবাক হয়েছি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে হিন্দুধর্ম বদলের চাপ সংবাদটিকে মিথ্যা বলে দাবি করেন নিহতের শাশুড়ি।

খানসামা উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক কেশব কর বলেন, ভারতীয় টিভি-৯ বাংলায় যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে—সেটি শতভাগ মিথ্যা। পারিবারিক কারণে এই মা ও মেয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই ভারতীয় সরকার ও গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান এমন মিথ্যা সংবাদ প্রচার করবেন না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে অতীতের মতো আমাদের শান্তিতে থাকতে দেন।

খানসামা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) নজমূল হক বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঝুলন্ত অবস্থায় মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে নিহতের শ্বশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। পারিবারিক কারণে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, এটি সাম্প্রদায়িক কোনো বিষয় নয়। ধর্ম বদলের চাপ বিষয়ে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ নেই। তাই ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এই উপজেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সকল ধর্মের মানুষ বাস করছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন বা হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। এরপরেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2024