হামিদুর রহমান,তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামের একজন প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন কৃষক নূর মোহাম্মদ কৃষি গবেষণার মাধ্যমে কৃষক পর্যায়েই এনে দিয়েছেন এক নতুন দিগন্তের সূচনা। খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল, খরা সহিষ্ণু, সুগন্ধিযুক্ত এবং স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবন করে তিনি হয়ে উঠেছেন কৃষি উন্নয়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।দীর্ঘদিন ধরে নিরলস পরিশ্রম ও একাগ্রতার মাধ্যমে কৃষি গবেষণা করে তিনি আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমের জন্য একাধিক কৌলিকসারি উদ্ভাবন করেছেন, যা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রতিকূল পরিবেশেও চাষের উপযোগী। উদ্ভাবিত ধানের সারিগুলো শক্ত গঠনবিশিষ্ট, সহজে হেলে পড়ে না এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলকভাবে কম। এগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো খরা সহিষ্ণুতা—প্রজনন কালে ১৫ থেকে ২০ দিন সেচ বা বৃষ্টির অভাব থাকলেও সেগুলো ভালো ফলন দিতে সক্ষম।নূর মোহাম্মদের উদ্ভাবিত “নূর ধান ২” এর জীবনকাল ১৪০ দিন। ধান গাছের গড় উচ্চতা ১১৩ সেন্টিমিটার, কুশির সংখ্যা গড় ১১টি এবং ছাড়ার দৈর্ঘ্য গড় ২৬ সেন্টিমিটার। ১০০০ পুষ্ট দানার ওজন ১২.৭০ গ্রাম। এই ধানের চাল সরু, চিকন, সুগন্ধিযুক্ত এবং রান্না উপযোগী ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি, ক্ষীর, পায়েস, এমনকি পান্তার জন্যও উপযুক্ত। আগাম কর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি কমে এবং সেচ খরচও অনেকাংশে হ্রাস পায়, ফলে কৃষকের লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি নূর মোহাম্মদের নিজস্ব কৃষি পরিষেবা ফার্মের গবেষণা প্লটে ৩৩টি সারির মধ্যে “নূর ধান ২” কর্তন করা হয়। কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই শেষে শুকনা ওজনে হেক্টর প্রতি ফলন দাঁড়ায় ৮ মেট্রিক টন, যা প্রতি বিঘায় প্রায় ২৬ মণ। চাল হিসেবে হেক্টর প্রতি ফলন ৫.৩ মেট্রিক টন, অর্থাৎ বিঘা প্রতি প্রায় ১৬.৬ মণ। কর্তনের সময় উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই সফল কর্তন কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন তানোর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউনো) লিয়াকত সালমান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা, উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিনিধি মোফাজ্জল ইসলাম, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম,উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন এবং স্থানীয় কৃষক প্রতিনিধি নওশাদ আলী ও ফারুক হোসেন সহ এলাকার অনেক কৃষক।গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত ছিলেন কৃষক নূর মোহাম্মদের এই উদ্যোগ শুধু তার নিজস্ব সফলতা নয়, এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের পথে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কৃষি গবেষণায় সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা যুক্ত হলে, তার উদ্ভাবনগুলো দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
Leave a Reply