শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি যেন এখন ঘুষ বাণিজ্যের এক অনলাইন-অফলাইন কেন্দ্র। এখানে সরকারি সেবা পেতে গেলে সাধারণ মানুষকে ঘুষের টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। অভিযোগের কেন্দ্রে আছেন ভূমি অফিসের পিয়ন মোস্তাফিজার রহমান, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘পিয়ন মোস্তা’ নামেই পরিচিত।পিয়নের হাতে অফিস ‘জিম্মি’ খাজনা দাখিল, নামজারি কিংবা পর্চা উত্তোলন— প্রতিটি কাজেই পিয়ন মোস্তা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দাবি করছেন। টাকা না দিলে কাগজপত্র ফেলেও দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কিচক বেলাই গ্রামের তাহমিনা। তিনি বলেন, “অনলাইনে খাজনা দেওয়ার পর অফিসে গেলে মোস্তা আমার কাগজ নিচে ফেলে দেয়। পরে টাকা দিলে আবার তুলে কাজ করে।শোলাগাড়ী গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, নামজারির জন্য ১৬ হাজার টাকা নিয়েও মাসের পর মাস তার কোনো কাজ হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে নানা তালবাহানা শুরু করে। স্থানীয়দের চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত ৭ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।দালাল-মোস্তার জুটি: দুর্নীতির সিন্ডিকেট স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসক অভিযোগ করেন, নামজারি ও দলিল তোলার জন্য পিয়ন মোস্তা এবং দালাল হান্নান তার কাছে ৩৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। “কাজ শেষ হওয়ার আগেই টাকা, পরে কাজের অজুহাত,” বলেন তিনি।অফিসের ভেতরের নীরবতা: রহস্যময় ভূমিকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরাও সব জানেন, কিন্তু কেউ মুখ খুলছেন না। অনেকে মনে করেন, হয়তো ব্যক্তিগত স্বার্থ কিংবা নিরাপত্তার কারণে তারা নীরব।অভিযোগ অস্বীকার ও প্রশাসনের আশ্বাস অভিযুক্ত মোস্তাফিজার রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিচক ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন বলেন, “ভূমি অফিসে দুর্নীতির কোনো স্থান থাকতে পারে না। তদন্ত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে।শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জিয়াউর রহমান জানান, “বিষয়টি আমিও শুনেছি। তদন্ত করে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো সরকারি অফিসে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।জনসেবা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি অফিস এখন পিয়নের নিয়ন্ত্রণে। ঘুষ ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ প্রশাসনের দৃশ্যমান পদক্ষেপের অপেক্ষায়।
Leave a Reply