রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাশিমপুরে সম্পত্তির লোভে মুছে ফেলতে চান বাবা মায়ের পিতৃপরিচয়!
গত সোমবার (২৩ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার বালুয়া মাশিমপুরে পালিত মেয়ে জাহানারা থেকে নাম বদলে হয়েছে সোমা আক্তার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সোমা আক্তারের নিজের বাবার নাম মৃত খুদু মিয়া। তার নিজের মায়ের নাম অন্জিলা বেগম। তার ছোট ভাইয়ের নাম মতিন মিয়া, বড় বোনের নাম কেতী মাই।
নাম ঠিকানা পরিবর্তন করে জাহানারা থেকে হয়েছে সোমা আক্তার। তার নিজের দাদার বাড়ি গেনারপাড়া ময়েনপুর।
জাহানারার সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে বাবার মৃত হলে মা অন্য জায়গায় বিয়ে বসে। এমত অবস্থায় আবু হানিফ নামে এক ব্যক্তি ৪ বছর বয়সে কোনো রকমের আইনি কাগজ ছড়া দত্তক নেয় জাহানারাকে।
আবু হানিফের দুই স্ত্রী মর্জিনা ও খাদিজার সন্তান না হওয়ায় জাহানারাকে দত্তক নেয় আবু হানিফ।
দীর্ঘদিন লালন পালন করে বড় করে বিয়েও দেন আবু হানিফ।
মৃত আবু হানিফের মৃত্যুর পর জাহানারা ওরফে সোমা আক্তার নিজের সন্তান বলে দাবি করেন।
এমতাবস্থায় তার সকল সম্পত্তি নিজের বাবার সম্পত্তি বলে দাবি করেন।
এলাকাবাসী ও সোমা আক্তারের বিয়ের ভোটার আইডি কার্ড ও বিয়ের কাগজে নিজের বাবা-মায়ের নাম পরিচয় না দিয়ে পালিত বাবার নাম ও সোমা আক্তারের স্বামীর মায়ের নাম ব্যবহার করেন।
আবু হানিফের ভাইয়ের ছেলে লাল মিয়া সহযোগিতায় ভোটার আইডি কার্ডের নাম ও জন্ম পরিচয় পাল্টে ফেলেন সোমা আক্তার।
মৃত আবু হানিফের স্ত্রী মর্জিনা বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন বলেন,
বর্তমানে বাংলাদেশের পারিবারিক আইন ইসলামিক অনুশাসনের ধারায় পরিচালিত। ফলশ্রুতিতে মুসলিমরা আইনত দত্তক নিতে পারেন না। বাংলাদেশের আইনে শিশু দত্তক নেওয়ার বিষয়ে কোনো বিধান নেই। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি একটি শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে পারেন। কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে।
১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর কাস্টডি ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীন এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে। কিন্তু এই আইন উক্ত উপায়ে অভিভাবকত্ব পাওয়া সন্তানকে অভিভাবকের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করার অধিকার দেয় না।
শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, দত্তক নেওয়ার সময় সন্তানের পিতৃ পরিচয় স্বত্ব ত্যাগ করে এমনভাবে নেওয়া যাবে না যে মা-বাবা আর কখনো ওই শিশুর মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবেন না। ইসলাম এ কাজ কখনো সমর্থন করে না। কেননা ইসলাম অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে বলেছে, কিন্তু সন্তান দখল করা কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় গোপন করার অনুমতি দেয়নি। দত্তক নেওয়া শিশুকে তাকে দত্তক নেওয়ার কারণ এবং প্রকৃত পিতামাতার পরিচয় জানাতে হবে। না হলে অনেক সময় শিশুটি পরিত্যক্ত বোধ করতে পারে।
দত্তক নেওয়া সন্তান দত্তক পিতামাতার উত্তরাধিকার হয় না, তবে চাইলে দত্তক পিতা-মাতা তাদের মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ দত্তক সন্তানের জন্য দান হিসেবে দিতে পারেন। সে জন্য পালক ব্যক্তিকে হয় জীবদ্দশায় হেবা করে সম্পত্তি দিতে হবে বা অসিয়ত করে যেতে হবে, যাতে পালকের মৃত্যুর পর সম্পত্তির অনধিক তিনের এক অংশ পেতে পারে।
Leave a Reply